চিরচেনা ধুলিয়া বাজার আজ অচেনা রুপ ধারন করছে।রাক্ষসী তেতুলিয়ার কড়াল গ্রাসে বাউফলের প্রাচীনতম বন্দর খ্যাতো ধুলিয়া বাজার আজ বিলিন তেতুলিয়ায়।গত ২-৩ দিনের ভাঙনে বাজারের অর্ধেকেরও বেশি দোকান পাট সরিয়ে নিতে হয়েছে।এর মধ্যে, ওলিউল্লা,বিকাশ, দুলাল,উওম,কৃষ্ণ দাস,লিটু,নিমাই,জাকির,রব এদের দোকানপাট রাতারাতি সরিয়ে নিতে হয়েছে। পল্টনের যাত্রী ছাউনি টুকুও শেষ।
নব্বইরোর্ধ আমেনা বেগম। যার চোখের সামনে হারিয়ে গেছে অর্ধশত কিলোমিটার জনপদ। ইতিপূর্বে তার পিতার বাড়ী ১৩ বার এবং স্বামীর বাড়ী তেঁতুলিয়ায় বিলীন হয়েছে ৬ বার।
একই সময়ে তিনি তার এলাকার দুটি বাজারকে করালগ্রাসী তেতুলিয়ায় হারিয়ে যেতে দেখেছেন ৬ বার। সাথে ২/৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা। অসংখ্য মসজিদ ও মন্দির তেতুলিয়ায় তলিয়ে গেছে গত দুই যুগে।
ভিটে-মাটি হারিয়ে নি:স্ব হয়েছে ধুলিয়া ইউনিয়নের দশ হাজারেরও বেশী বাসিন্দা। তারপরও তারা জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলছে তেতুলিয়ার সাথে।
আমেনা বেগম বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের ঘুরচাকাঠী গ্রামের মৃত: রশিদ মাঝির মেয়ে।আমেনার বাবা তেতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করেই সংসারের জীবিকা নির্বাহ করায় তাদের বসতি গড়তে হয় নদীর কাছাকাছি এলাকায়। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রশিদ মাঝিকে ৮ বার ভাঙনের মুখে পড়ে নতুন করে বসতি গড়তে হয়েছে।আমেনার বাবা রশিদ মাঝি মারা যাবার পর তার দুই ভাইকে ৫ বার তেতুলিয়ায় বিতারনে বসতি নিয়ে অন্যত্র ছুটতে হয়েছে। দুই যুগে তেতুলিয়ার সাথে লড়াই করে ইতিমধ্যে তারা তিন গ্রামের বাসিন্দা এবং তিনবার নতুন করে ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভাঙনে ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে ধুলিয়া ইউনিয়নের গ্রাম দুটি।
এছাড়াও বাউফল উপজেলার ধুলিয়া এবং দূর্গাপাশা(বাকেরগঞ্জের) ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকার নদীতে বিলীন হয়েছে।এদিকে সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলের পানি তেতুলিয়া নদীতে ঢুকতে শুরু করেছে। সেই সাথে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তেতুলিয়া নদীতেও।
ইতিমধ্যে বেপরোয়াভাবে ভাঙ্গতে শুরু করছে তেতুলিয়া পাড়ের বিভিন্ন এলাকা। বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম। বাউফলের তেতুলিয়ার পাড়ের সাধারণ মানুষের মনে সর্বদা আতংক বিরাজ করছে।
নদীর তীরে নেই বেঁড়িবাধ, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। যে টুকু আছে তাও কখন চোখের পলকে তেতুলিয়ার গর্ভে চলে যায় তা নিয়ে দু:চিন্তায় হাজার হাজার বাসিন্দা। ধিরে ধিরে একের পর এক বাড়ি এখন বিলিন হচ্ছে নদী গর্ভে।
এদিকে তেতুলিয়ার ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে কিনা তা জানে না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রা।
ভাঙ্গনের কারণে বাউফল উপজেলার মানচিত্র বদলে দিয়েছে প্রমত্তা তেতুলিয়া।
২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ধুলিয়ার ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ধুলিয়া লঞ্চ ঘাট এখন গাছে বাঁধা, মাদরাসা দাড়িয়ে আছে তেতুলিয়ার পাড়ে।
ইতিমধ্যে লঞ্চ ঘাট এলাকায় ৫ একর জায়গার সিংহভাগ নদীগর্ভে বিলীন। প্রস্তাবিত ধুলিয়া-গোবিন্দপুর খেয়াঘাটের সড়ক-নতুনবাজার- পানেরবাজার চলাচলের একমাত্র রাস্তাও এখন আর নেই।ঝুঁকিতে রয়েছে ভাষা সৈনিক সৈয়দ আশরাফ সাহেবের কবর টুকুও।
ধুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান(রব) জানান,ধুলিয়া পুরাতন বন্দর উপজেলার ঐতিহ্যবাহি একটি বাজার। ইতিপূর্বে বাজারটি ৩/৪বার তেতুলিয়ায় ভাঙনের শিকার হয়েছে। গত দুইবছর পুর্বে বাজারটি অন্যত্র স্থাপন করা হয়েছে। সেটিও আজ হুমকির মুখে। প্রতিনিয়ত কাদাচ্ছে এই জনপদের মানুষগুলোকে।
এ বিষয়ে স্থানীয় যুবক মহিবুল ইসলাম মান্না বলেন,ঢাকা প্রেসক্লাবসহ নিজ এলাকায় আমরা কয়েকবার মানববন্ধন করেও তেমন কোন পজেটিভ ফলাফল পাইনি।এই এলাকার মানুষদের এই সমস্যা টির মোকাবেলায় সকলের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আফজাল হাওলাদার যানান,কয়েকদিন আগের নদী ভাঙনে বাজারের ৭-৮ টি দোকান অনত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে,আরও বেশ কিছু দোকান ও বাজারের মসজিদ ঝুকির মধ্যে আছে।
বিস্তির্ন জনপদের সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হওয়ায় মানুষ যেমন নি:স্ হচ্ছে, তার সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে নতুন প্রজন্মের শিশুরা,এমনটাই যানালেন ধুলিয়া কলেজের প্রভাষক তুষার কর্মকার।
এছাড়াও দানশিল ব্যাক্তি মনির খান বলেন আমার দেখা মতে নদীর মুখে মসজিদ টি। এ বছর থাকবে কিনা বলা মুশকিল।তাছাড়া লঞ্চ ভেরার পল্টন টিও যে গাছের সাথে বাঁধা ছিলো তাও ভেঙে পরে গেছে।এখন লঞ্চ ভিরতেও বিভিন্ন সমস্যা হয়।
Leave a Reply