অল্প কাজে মুগ্ধতা ছড়ানোর মতো পারদর্শিতা খুব কম শিল্পীর মধ্যেই আছে। বছরে দু/একটি কাজ করেও যারা সারা বছর আলোচনায় থাকেন তাদেরই একজন অপি করিম। তার প্রাণবন্ত হাসি যেন মন ভরিয়ে দেয় দর্শকের, সাধারণ সৌন্দর্যেই দু্যতি ছড়ান তিনি। নাটক, টেলিফিল্ম, উপস্থাপনা, এমনকি নাচ- সব ক্ষেত্রেই তার দু্যতি ছড়ানো প্রতিভা। ‘৫১ বর্তী’র শিউলী থেকে ব্যাচেলরের সাথী কিংবা মাধবীলতা হয়ে বিমোহিত করে চলেছেন বছরের পর বছর। এরই ধারাবাহিকতায় ফের দর্শকদের মুগ্ধ করলেন অপি করিম। এবার কোরবানির ঈদে শত শত নাটক-টেলিফিল্মের মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত টেলিছবি আশফাক নিপুণের ‘ভিকটিম’। গত ৩ আগস্ট লাইভ টেকনোলজির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়েছে এটি। করোনার এই দুর্যোগে দর্শকদের মাঝে ভিন্ন বিনোদন ছড়িয়েছে ‘ভিকটিম। শোবিজের অনেক তারকা, সমালোচক এমনকি ভালো দর্শকরাও বলছেন এটি টেলিভিশন ফিকশনের ক্ষেত্রে নতুন ভাষা দিয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর রসায়ন এভাবে আগে ধরা পড়েনি। এ টেলিছবিতে অপি এখনকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট নারীর প্রতিচ্ছবি। যিনি কাজের ক্ষেত্রে সফল, সংসারেও সফল। কিন্তু এ দেশের নারীরা অনেক অনুভূতিকে প্রকাশের স্বাধীনতা আজও রাখে না। তাই পরিণতিতে অপি সেই সংসারী নারীরই প্রতিনিধিত্ব করেন। এ টেফিফিল্মে অপি অভিনয় করেন আফরান নিশোর বিপরীতে। এর আগেও তিনি নিশোর সঙ্গে কাজ করেছেন। ‘ভিকটিম’-এর নির্মাতা আশফাক নিপুণের সঙ্গে অপির কাজের রসায়ন এর আগেও প্রশংসিত হয়েছে। তিনি যখন থেকে অভিনয়ে একদমই অনিয়মিত, তারপরও যে কাজগুলো করেছেন তার সিংহভাগই নিপুণের পরিচালনায়। নিপুণ বলেন, ‘আমার সবচেয়ে পছন্দের অভিনেত্রী অপি। তার কাজের ভক্ত তখন থেকে যখন জানতামও না একদিন শোবিজে কাজ করবে। ২০১৬ সালে ‘অবাক ভালোবাসায়’ নাটকের মাধ্যমে আমাদের একসঙ্গে কাজের যাত্রা শুরু। সেই কাজটি শুরুর দিন আমি খুব ভয়ে ছিলাম। কারণ আমি শুনেছিলাম তিনি কাজের ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে। তার ওপর আমি আবার আগে থেকে শিল্পীদের স্ক্রিপ্ট দিতে পারি না। স্পটে বসেই দৃশ্য লিখি, মহড়া করি, তারপর শুটিং। কেন জানি আমার কাজের ধারা তার ভালোলাগে। তাই প্রথম নাটকেই দু-তিনটি দৃশ্যের পর তিনি আমার ওপর আস্থা পেয়ে যান। আজ পর্যন্ত এমন হয়নি যে আমি তাকে কোনো কাজের প্রস্তাব দিয়েছি আর তিনি না করেছেন। আসলে আমিই চাই এমন গল্প তার কাছে নিয়ে যেতে যাতে তিনি না করতে পারেন না। আর যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তার আগে খুব নার্ভাস থাকেন, সময় নেন চরিত্রে ঢুকতে। কিন্তু ক্যামেরা অন হলেই যেন ম্যাজিক সৃষ্টি করেন তিনি। আমি চাই, আমাদের এই ক্রিয়েটিভ পার্টনারশিপ অনেক দিন চলুক।’ অপি করিম বলেন, ‘আমি কেন কম কাজ করি তা সবাই জানেন। অন্য পেশা আছে, তাছাড়া মন থেকে সায় দিলেই সেই গল্পে কাজ করি। আর গল্প বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটা পরিচালক আশফাক নিপুণ বলেই দিয়েছেন। ‘ভিকটিম’ এর কাজটি যদি ভালো হয়, সবাই পছন্দ করেন তার পুরো কৃতিত্বই পরিচালকের।’ মাত্র আড়াই বছর বয়সে আলোচিত টিভি নাটক ‘সকাল-সন্ধ্যা’র পারুল চরিত্রটিতে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন অপি। অবশ্য টিভি মিডিয়ায় অপির প্রথম কাজ ছিল ‘কলকাকলী’ নামের একটি অনুষ্ঠানে। ১৯৯৯ সালে লাক্স ফটোজনিক সুন্দরী হবার পর লাক্সের মডেল হওয়ার সুবাদে বড় ধরনের সুযোগ আসে অপির মডেলিং ক্যারিয়ারেও। টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করা শুরু করেন ১৯৯৯ সালে ‘তেপান্তরের রূপকথা’ টেলিফিল্ম দিয়ে। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন নাট্যঙ্গনের একজন শীর্ষ অভিনেত্রী। তার এই সফল যাত্রায় সাফল্যমন্ডিত করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে নাট্যজগতের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ধারাবাহিক নাটক ‘৫১বর্তী’। ধারাবাহিক ও খন্ড নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও প্রশংসিত হন। ২০০৪ সালে করেছেন ক্যারিয়ারের একটি মাত্র চলচ্চিত্র ‘ব্যাচেলর’, আর তাতে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার ও মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার।
Leave a Reply