তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ-বিদায়। কিন্তু শব্দটির আপাদমস্তক বিষাদে ভরা। শব্দটা কানে আসতেই মনটা কেন যেন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। এমন কেন হয়? কারণ এই যে, বিদায় হচ্ছে বিচ্ছেদ। আর প্রত্যেক বিচ্ছেদের মাঝেই নিহিত থাকে নীল কষ্ট। বিদায় জীবনে শুধু একবারই নয়, এক জীবনে মানুষকে সম্মুখীন হতে হয় একাধিক বিদায়ের। সে-ই যে জন্ম লগ্ন থেকে বিদায়ের সূচনা, তারপর জীবন পথের বাঁকে বাঁকে আরো কত বিদায় যে অনিবার্য হয়ে আসে…।
মানবশিশু ভুমিষ্ট হয়েই কাঁদতে থাকে। কেন সে কাঁদে? সে তো কাঁদবেই। এতদিন মায়ের নাড়ির সঙ্গে তার যে বন্ধন ছিল সেটি যে আজ ছিন্ন হল। এভাবে জীবনের পরতে পরতে ছিন্ন হয় আরো কত প্রিয় বন্ধন!
জীবনে সাফল্যের জন্য সবাইকে ছেড়ে বিদেশ গমনে বাবা, মা,ভাই,বোন,আত্মীয় স্বজন
ও বন্ধুর থেকে বিদায় নেয়ার বিষয়টিও এমনি এক নিবিড় বন্ধন ছিন্ন হওয়া, যা খুব সহজে ভোলা যায় না। তবে এ বিদায়ের বেলায় কষ্টের মাঝেও এক রকম আনন্দ থাকতে পারে যদি সান্তনার সংকট না থাকে। এই সান্তনা জীবনের সফলতার সান্ত্বনা।
মানবজীবনের সর্বশেষ যে বিদায় অবধারিত হয়ে আসে তার নাম মৃত্যু। মৃত্যু এমন এক বিদায়ের নাম, যার দিন-তারিখ কেউ বলতে পারে না। বলা সম্ভব নয়। কুরআন মজিদে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন … ‘কোনো মানুষ জানে না, সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কোনো মানুষ জানে না, সে কোন স্থানে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’-সূরা লোকমান ৩৪
শেষ বিদায় যেহেতু সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে বিষাদের তাই জীবনের অন্যান্য বিদায়ের সময় শেষ বিদায়ের কথা স্মরণ করতে হবে। যাতে তখন কোনোরূপ পরিতাপ নিজেকে দগ্ধ না করে অতীত জীবনের কর্মের জন্য। তাহলেই জীবনের খন্ড খন্ড বিদায়গুলো সার্থক হয়ে উঠবে নিশ্চয়।
—::নজরুল ইসলাম মাহফুজ::—
(বরিশাল থেকে)
Leave a Reply