পর্যটকশূন্য রাঙামাটি, বড় ক্ষতির শঙ্কা!


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৬, ২০২৪, ৪:০৭ অপরাহ্ন /
পর্যটকশূন্য রাঙামাটি, বড় ক্ষতির শঙ্কা!

দেশের চলমান পরিস্থিতির প্রভাব পর্যটন শিল্পেও পড়েছে।মৌসুম শুরুতেই রাঙামাটি পর্যটকশূন্য। প্রতিবছর বৃষ্টিপাত কমে এলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই রাঙামাটিতে ভিড় জমান ভ্রমণপিপাসু মানুষ। শুক্র-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে উপচেপড়া ভিড় জমে পর্যটকদের। কিন্তু এবার মৌসুমে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করায় রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই ও সাজেকসহ বিনোদন স্পটগুলো পর্যটকশূন্য।

১৯-২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর সম্ভাব্য অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে প্রথমে রাঙামাটি পরে অন্য দুই পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর নিরুৎসাহিত করার নির্দেশনা দেয় প্রশাসন। সর্বশেষ তিন পার্বত্য জেলায় ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার সরকারি নির্দেশনার কারণে বর্তমানে একবারে পর্যটকশূন্য রাঙামাটি। এর আগে পাহাড়ে ওই সহিংসতার জেরে সাজেকে তিন দফায় ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যে সময়ে রাঙামাটিতে পর্যটকদের মুখরতা থাকার কথা, ঠিক তখনই দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে টানা পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি ছিল। কিন্তু এ বছর তার বিপরীতে রাঙামাটি হয়ে পড়ে পর্যটকশূন্য। এতে হতাশাগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সরকারি পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন ৫০-৭০ হাজার লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান খোদ রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা। সব মিলিয়ে সরকারি নিরুৎসাহিতকরণ নির্দেশনার কারণে এ বছর ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে ধারণা করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

তারা বলেন, ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকরা ভিড় জমান রাঙামাটির প্রকৃতিতে ঘুরতে গিয়ে। ঘুরতে যান মেঘ-পাহাড়ের প্রকৃতি বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটন এলাকা পর্যন্ত। উপভোগ করেন রাঙামাটির মনোরম ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্কের লাভ পয়েন্ট, সুবলং ঝরনা, কাপ্তাইসহ বিনোদন স্পটগুলো। রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে পর্যটনসংশ্লিষ্ট খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। কিন্তু সাজেক, সুবলং ঝরনাসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে কোথাও নেই পর্যটক। ফলে পর্যটনসংশ্লিষ্ট লোকজন হতাশায়। মৌসুমের শুরুতে এমন অবস্থা রাঙামাটির পর্যটন খাতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় তারা।

বেসরকারি পর্যটন স্পট রাঙামাটি বার্গি লেকের পরিচালক বাপ্পী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, শুধু নিরাপত্তার জন্য পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবে দেখা দরকার।

সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা বলেন, প্রতি শুক্র-শনিবার প্রায় ২-৩ হাজার পর্যটক সাজেক বেড়াতে যায়। সরকারি ছুটির দিনে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ সময়ে ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সাজেক। সব রিসোর্ট মালিক বেকার সময় কাটাচ্ছেন। কর্মচারীদের এ মাসের বেতন দেওয়াও সম্ভব হবে না।

শুক্রবার বিকালে রাঙামাটির একাধিক পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া বাইরের কোনো পর্যটক নেই। রাঙামাটি পর্যটন মোটেলের ঝুলন্ত সেতুর প্রবেশ কাউন্টারের মো. সোহেল জানান, সকাল থেকে ২০ টাকা প্রবেশমূল্যের টিকিট বিক্রি হয়েছে কেবল ১০০ থেকে ১৫০টি।

এদিকে ৮ অক্টোবর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সম্প্রীতি সমাবেশে পর্যটনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দেন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এর পর দুই সপ্তাহ পার হলেও সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। আগামী ৩১ অক্টোবর ২৪ দিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।