আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চেয়ে হাইকোর্টে কোনো রিট আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। সোমবার (২৮ অক্টোবর) এবি পার্টির সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
সারজিস আলম বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ হয়েছে ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রিট করেছেন সারজিস-হাসনাত’। আমি এবং হাসনাত কেউই এই বিষয়ে কথা বলিনি এখন পর্যন্ত। আমাদের রিটের কোথাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ বা নিবন্ধন বাতিলের কথা নেই।
রিটের বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত দুটি রিট করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিগত ৩টি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দেবে না সে বিষয়ে প্রথম রিট। এই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদের পলিটিক্যাল সব অ্যাক্টিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না সে বিষয়ে দ্বিতীয় রিট।
সারজিস বলেন, আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার নির্বাচনে যে ক্ষমতায় এসেছিল প্রত্যেকটি নির্বাচন ছিল প্রহসনের নির্বাচন। এই নির্বাচনগুলো যদি প্রহসনের নির্বাচন হয় তাহলে অবশ্যই এই নির্বাচনগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা উচিত। যদি এই নির্বাচনগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় তাহলে বিগত তিনটি টার্মে আওয়ামী লীগের যে দোসররা সংসদের বিভিন্ন আসনে বসে বিভিন্ন জায়গায় সরকারি যে সুযোগ সুবিধাগুলো লাভ করেছে এগুলো অবৈধ সুযোগ-সুবিধা। বিগত তিনটি টার্মে আওয়ামী লীগ যে অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল এটিকে অবৈধ ঘোষণা করা, তাদের সুবিধাগুলো তারা ফেরত দেবে কিনা এই বিষয়ে রিট করার জন্য আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রাথমিক একটি ড্রাফট করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এটির প্রসেস এখনও কমপ্লিট হয়নি। আমরা আগামীকাল কিংবা পরশু এই প্রসেসটি কমপ্লিট করে মিডিয়ার সামনে প্রেস ব্রিফিং করে সামগ্রিক বিষয়গুলো বলতাম।
রিটের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, আমাদের আজকে মিডিয়ায় এমনভাবে প্রেজেন্ট করা হয়েছে- আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চেয়ে রিট করেছেন সারজিস-হাসনাত। আমি-হাসনাত কেউই এই বিষয়ে কথা বলিনি এখন পর্যন্ত। যেহেতু আমাদের প্রসেসটি শেষ হয়নি। আমি আমাদের আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনিও এ বিষয়ে কথা বলেননি। তো আমাদের জায়গা থেকে মনে হয়েছে নিশ্চয়ই কোনো একজনের মাধ্যমে একটি সাইড টক হয়ে আসলে বিষয়টি কারও কাছে গেছে এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে গেছে।
গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক আরও বলেন, আমাদের জায়গা থেকে আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে- যে কারও বিষয়ে স্পেসিফিক কোনো তথ্য যদি আপনাদের কাছে যায়, প্রথম যিনি নিউজ করবেন তাকে অন্তত সে বিষয়টি ফ্যাক্টচেক করা প্রয়োজন। পরবর্তীতে নিউজটি মিডিয়ায় এলে এতে বিভ্রান্তি ছড়ায় না।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে অবস্থানটি স্পষ্ট করি। আমি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছি যে, আমাদের রিট করার যে প্রসেস, সেটি হয়তো আগামীকাল সম্পূর্ণ হবে। আমি এখনও এটা নিয়ে ভাবছি, এই দুটি রিট নিয়ে একটি রিটে যাওয়া যায় কিনা। আমরা আইনজীবীদের আরও পরামর্শ নিচ্ছি। তারাও বলেছেন, দুটি রিট মিলে একটি রিটে যাওয়া যায়।
নিজেদের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করে তিনি বলেন, রিট আমরা অবশ্যই করব। কারণ এই যে তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে যে সরকার এসেছিল তারা অবশ্যই অবৈধ সরকার। এটি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ সাক্ষী দেবে। সেই জায়গায় আগামীকাল কিংবা পরশুর মধ্যে জানিয়ে দেব যে, আমাদের রিট দুটি মিলিয়ে আমরা একটিতে যেতে পারছি কিনা কিংবা দুটিই থাকছে কিনা। এবং স্পেসিফিক আমাদের রিটে মূল কথাটি কী হচ্ছে এটা জানালেই আপনাদের বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে।
এর কিছুক্ষণ আগে সারজিস আলম ফেসবুক একটি পোস্ট করে রিটের বিষয়টি পরিষ্কার করেন। সেখানে তিনি লেখেন-
‘২টি রিট করেছি।
১. আওয়ামী লীগের বিগত ৩টি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দিবে না সে বিষয়ে প্রথম রিট ৷
২. এই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদেরকে পলিটিক্যাল সকল অ্যাক্টিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না সে বিষয়ে দ্বিতীয় রিট ৷
দল হিসেবে নিষিদ্ধ কিংবা নিবন্ধন নিষিদ্ধের কোনো কথা রিটে নেই।’
আপনার মতামত লিখুন :